তেরখাদা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও জনবহুল এলাকায় এখন চোখে পড়ছে গাছপালায় ঝোলানো ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি। রাজনৈতিক দলের শুভেচ্ছা বার্তা, কোচিং সেন্টার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে বহুজাতিক কোম্পানির পণ্যের প্রচারণাও ঠাঁই পেয়েছে গাছের শরীরে-তাও আবার পেরেক ঠুকে!
ফলে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কঘেঁষা গাছগুলোর ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে নির্মমতা। ব্যানার ঝোলানোর সময় পেরেক দিয়ে ছিদ্র করায় গাছের গাঁয়ে রস জাতীয় তরল বের হচ্ছে, শুকিয়ে যাচ্ছে ডালপালা ও পাতা। এমনকি অনেক গাছের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তেরখাদা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক আলহাজ্ব লিয়াকত আলী বলেন, ‘রাস্তার ধারে শত শত গাছে যেভাবে পেরেক মারা হচ্ছে, এতে শুধু পরিবেশ নয়, জীববৈচিত্র্যও হুমকিতে পড়েছে।’
স্থানীয় কাঠমিস্ত্রী মো. হাসিব জানান, ‘পেরেকের কারণে কাঠের গাঁয়ে পচন ধরে, কাঠের মান ও দাম কমে যায়।’
স-মিল মালিক শওকত মোল্লাও জানান, ‘পেরেক থাকার কারণে করাত ভেঙে যায়, শ্রমিকরাও মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হন।’
বিষয়টিকে গুরুতর পরিবেশগত ক্ষতি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, গাছের গাঁয়ে পেরেক মারা হলে ফ্লোয়েম ও জাইলেম নামক পরিবাহী টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছের খাদ্য ও পানি পরিবহন বিঘ্নিত হয় এবং ধীরে ধীরে গাছ মরে যেতে পারে।
উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘মানুষের মতো গাছেরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থাকে। ছিদ্র করলে সেখানে পচন ধরে এবং এক সময় গাছ মারা যায়।’
আইন অনুযায়ী গাছের গাঁয়ে পেরেক মেরে কোনো কিছু ঝুলানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই নিষিদ্ধ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জান্নাতুল আফরোজ স্বর্ণা বলেন, ‘গাছে পেরেক ঠুকে ব্যানার বা সাইনবোর্ড ঝোলানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি গাছের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ নষ্ট করে দেয়। আমরা পরিবেশ রক্ষায় প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
পরিবেশবিদদের মতে, এভাবে গাছের ক্ষতি চলতে থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরও বাড়বে। এখনই প্রয়োজন গণসচেতনতা, প্রশাসনের সক্রিয় নজরদারি এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ।
খুলনা গেজেট/এনএম